মফিজুল আ’লীগ নেতা,তাই নৈশপ্রহরী হয়েও ক্ষমতায় ক্ষত করতেন শিক্ষকদের

মফিজুল আ’লীগ নেতা,তাই নৈশপ্রহরী হয়েও ক্ষমতায় ক্ষত করতেন শিক্ষকদের

   ॥ বিশেষ প্রতিবেদক ॥

তিনি ওয়ার্ড আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তার অঢেল ক্ষমতা আর পেশী শক্তির দাপট হিংস্র পশুদেরও হার মানাতো। কারন অকারনে সাধারণ মানুষের উপর চালাতো পৈচাশিক নিপীড়ন আর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার। তার একচ্ছত্র আধিপত্যের কাছে গ্রামবাসী সবসময়ই থাকতো তটস্থ্য। বলছি,ভোলা সদরের ৫৫ নং চরসামাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মফিজুল ইসলামের কথা। স্থানীয়
(০২ নং ওয়ার্ডস্থ্য) ছিফলী নামক গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চণ মিয়ার গুনধর পুত্র মফিজুল ইসলাম বিগত আ’লীগ জমানায় দলীয় ক্ষমতার দাপটে গ্রামের মানুষকে বিষিয়ে তুলেছেন। পড়ালেখায় প্রাথমিকের গন্ডি না পেরুলেও নিজেই অষ্টম শ্রেণির সনদ তৈরী ও সঠিক জম্ম তারিখ গোপন রেখে জাল ভোটার আইডি এবং জম্ম নিবন্ধন সনদ বানিয়ে নৈশপ্রহরী চাকুরী বাগিয়ে নিয়েছেন। নিজে প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা তাই ফ্যাসিষ্ট জমানার কোনোকালেই তাকে স্কুলে ডিউটি করতে হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে,মফিজুল ইসলামের প্রকৃত এনআইডি (যার নম্বর-০৯১১৮২১৩৪৬৩১০) অনুযায়ী জম্ম ১৭-০৫-১৯৭৯ মোতাবেক তার বয়স ৩৪ বছর ৮ মাস ০৫ দিন কিন্তু তা গোপন রেখে তিনি জালজালিয়াতির আশ্রয়ে তার জম্ম তারিখ ০১-০৩-১৯৮৬ ইং সাল তৈরী করে ওই স্কুলের নাইটগার্ডের চাকুরী বাগিয়ে নেন। চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে মফিজুল তার কাজে কখনো উপস্থিত হতেননা। গ্রামবাসী জানান,৫৫ নং চরসামাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তার ভয়ে সবসময়ই আতঙ্কিত থাকতো। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান,নৈশপ্রহী মফিজুল ইসলাম কখনো তার কর্মস্থলে আসেননা। বিগত আ’লীগ সরকারের আমলে নিজের ইচ্ছেমত মাসের শেষে জোরপূর্বক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন। আমি বাঁধা দেয়ায় আমাকেও বহবার লাঞ্চিত হতে হয়েছে। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরাও তার দ্বারা অনেক অপদস্ত হয়েছে। তিনি বলেন,চাকুরী নিতে গিয়ে মফিজুল ইসলাম প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রই জালজালিয়াতি করে দিয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর সনদ’টিও নিজে বানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে চরসামাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নপত্রে জানানো হয় উক্ত মফিজুল ইসলাম ওই স্কুলের নামে অষ্টম শ্রেণির যে সনদ’টি চাকুরীতে জমা দিয়েছেন,তা তাদের বিদ্যালয় থেকে আদৌ দেয়া হয়নি। এধরণের কোনো ডকুমেন্টস ওই স্কুলে নেই। গ্রামের ভুক্তভোগীরা জানায়,জুলাই বিপ্লবকালে মফিজুলের নেতৃত্বে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা চরসামাইয়া ইউনিয়নের আনাচকানাচে বৈষম্য বিরোধী বহু ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে। বর্তমানে জার্সি বদল করে এই মফিজুল অন্য যেকোনো দলে ভিড়তে চেষ্টা তদ্বির অব্যহত রেখেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

অপরদিকে জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাকুরী নেয়ার বিষয়ে ছিফলী গ্রামের বাসিন্দা মো: আবু সাঈদ উপজোলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরের একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করতে ভোলা সদর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এ-টি-ও ইজাজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। বিষয়টি নিয়ে ভোলা সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ইজাজুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান,তদন্তে নৈশপ্রহরী মফিজুল ইসলামের জালজালিয়াতি ও ক্ষমতার দাপটে অপকর্মের বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। ফলে তার চলমান বেতন-ভাতাদি বন্ধ করে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে উর্ধ্বন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান এ শিক্ষা কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আ’লীগ নেতা ও নৈশপ্রহরী মফিজুল ইসলামের সাথে কথা হলে,তিনি বলেন,আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। বলেন,দলের পদ-পদবী ব্যবহার করলেও কখনো সন্ত্রাস করিনি। সঠিক জাগজপত্রের মাধ্যমেই চাকুরী করছেন বলে দাবী করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *