
ভোলা প্রতিনিধি
ভোলার বোরহানউদ্দিনের দালালপুর গ্রামে লিজা বেগম (২২) নামের এক কলেজ পড়ুয়া গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে শিশু সন্তানসহ পিটিয়ে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে শশুর বাড়ীর লোকোরা। তিনলাখ টাকা যৌতুক চেয়ে দুইলাখ টাকা আদায় করে লিজার স্বামী ফাহিম হোসেন রায়হানকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়ার পর থেকে বাকী টাকার জন্য গৃহবধূকে নানা সময় নির্যাতন চালাতে থাকে শশুর,শাশুরী ও দেবররা। এভাবে চলতে থাকার এক পর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারী/২০২৫ ইং তারিখে নিপীড়নের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ওইদিন শশুর নুরে আলম প্রথমে পুত্রবধূ লিজাকে বেধড়ক পেটায়। এভাবে একেএকে শাশুরী ফেরদৌস বেগম,দেবর রাসেল ও রাফেজ পালাক্রমে পৈচাশিক নির্যাতন চালায় লিজা বেগমের উপর। এসব দূর্বৃত্তরা লিজার ৫ বছর বয়সী কন্যা শিশু রাফিয়া ইসলাম রাওহী’সহ লিজাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। শশুর বাড়ীর দূর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়ে আহত লিজা বেগম বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে সন্ত্রাসী শশুর নুরে আলনের নেতৃত্বে তার গুন্ডা বাহিনী লিজাকে সেখানে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। ফলে নিরুপায় গৃহবধূ লিজা বেগম লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। লিজা বেগম ও তার পরিবারের লোকজন জানান,২০১৮ ইং সালের ১৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবেই একই এলাকার দালাল পুর গ্রামের বাসিন্দা নুরে আলমের ছেলে ফাহিম হোসেন রায়হানের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর শশুর বাড়ীতে দিনগুলো ভালোই কাটছিলো লিজার। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে লিজার কন্যা সন্তান জম্মের পর থেকে। প্রথনে শশুর-শাশুরী ও দেবররা লিজাকে অপয়া-অলক্ষ্মী ও অক্ষম বলে ভৎসনা করতে থাকে। এরপর শুরু হয় যৌতুক চাওয়া। এভাবে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে লিজার শ্রমিক বাবা মোসলেম মিয়া বহু কষ্টক্লেশ করে মেয়ে জামাই ফাহিমকে দুইলাখ টাকা প্রদান করেন। ওই টাকা নেয়ার পর বিদেশ চলে যায় ফাহিম। যাওয়ার সময় ফাহিম স্ত্রী লিজাকে সাফ জানিয়ে দেয়,বাকী একলাখ টাকা না দিলে তার বাড়ীতে লিজার ঠাই হবেনা। একপর্যায়ে ফাহিম বিদেশ চলে যাওয়ার পর যৌতুকের অবশিষ্ট টাকা দিতে না পারায় নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে স্বামীর বাড়ী থেকে শশুরের নেতৃত্বে লিজা বেগমকে তাড়া খেয়ে চলে যেতে হলো। এদিকে এঘটনার পর গৃহবধূ লিজা বেগম স্বামী,শশুর,শাশুরী ও দেবরসহ ৫ জনকে আসামী করে ভোলার নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল আদালতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী২৫ ইং একটি মামলা
(যার নম্বর নারী ও শিশু-৯২) দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বিজ্ঞ বিচারক সেটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বোরহানউদ্দিন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। গৃহবধূ লিজার ভাষ্যানুযায়ী ওই কর্মকর্তা প্রভাবশালী আসামী পক্ষদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উক্ত ঘটনাকে অসত্য বলে কোর্টে একটি মনগড়া ও কাল্পনিক প্রতিবেদন দাখিল করেন। ভিক্টিম লিজা বেগম এই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কোর্টে না-রাজি পিটিশন দায়ের করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এদিকে মামলা তুলে নিতে সন্ত্রাসী শশুর নুরে আলম ও তার ক্যাডার বাহিনী লিজা এবং পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে ভিক্টিম জানিয়েছেন। বর্তমানে স্বামী ও শশুরের গুন্ডাদের ভয়ে লিজার পরিবার এখন চরম আতঙ্ক, উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে,অভিযুক্ত শশুর নুরে আলমকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি গণমাধ্যমের ফোনকল রিসিভ করেননি।